তীব্র ঝড় বৃষ্টিতেও ভাঙ্গা ঘরে চলছে পাঠদান


সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা প্রকাশের সময় : ১৮/০৬/২০২৪, ১২:০৭ PM
তীব্র ঝড় বৃষ্টিতেও ভাঙ্গা ঘরে চলছে পাঠদান

বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই টিনের বেড়া আর টিনের চালার ঘরে কোনোরকমে পাঠদান চলছে। দীর্ঘ ২৭ বছর পেরিয়ে গেলেও স্হায়ী অবকাঠামোর মুখ দেখেনি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার চলনবিল অধ্যুষিত উধুনিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম তেলিপাড়ায় অবস্থিত তেলিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতন।তবুও স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন বুনছেন বিদ্যালয়কে ঘিরেই।

বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মৃত্তিকা সরকার বলে,”ভাঙ্গা ঘরে পড়তে আমাদের কষ্ট হয়।একটু বৃষ্টি হলেই পানি নুইয়ে পড়ে।ঝড়ের মধ্য ভয় লাগে।মনে হয় কখন যেন টিনের চালা ভেঙে যায়।”

বিদ্যালয়সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার তেলিপাড়া গ্রামের শিক্ষাঅনুরাগী কিছু যুবকেরা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালে বিদ্যালয়টি মাসিক বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে সরকারি অনুদানের জন্য নিম্ন মাধ্যমিক(ষষ্ঠ-অষ্টম)তালিকাভুক্ত (এমপিওভুক্ত) হয়।২০১১ সালে মাধ্যমিকে পাঠদানের একাডেমিক স্বীকৃতি পেয়ে মাধ্যমিকের পরীক্ষার ঈর্ষনীয় সাফল্য আসলও মাধ্যমিক(নবম-দশম) আজও এমপিওভুক্ত হয়নি।আবার বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত তেমন কোন কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নাই।

সম্পতি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রায়১১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থের টিনের দো-চালা ঘরে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বাঁশ ও ভাঙ্গাচোরা টিনের বেড়া দিয়ে ভাগ করে তৈরি করা হয়েছে ৬‐৭ টি কক্ষ। কক্ষের বেড়াগুলো একেবারেই জরাজীর্ণ।দরজাগুলো-জানালা কোনটি ভাঙ্গা আবার কোনোটি জোড়াতালি লাগানো। শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ গুলোর অবস্থাও একবারে শোচনীয়।

একপাশ থেকে অপর পাশের সবকিছু দেখা যায়। আর কক্ষের চালার টিনগুলো ফুটো হয়ে গেছে।এতে করে সামান্য বৃষ্টি হলেই বৃষ্টির জল শ্রেণি কক্ষে নুইয়ে পড়ে।এতে করে শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়া কষ্ট হয়ে যায়।আবার,টিনের চালায় সিলিং না থাকার কারনে প্রচন্ড তাপদাহে নিদারুণ কষ্টে ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের। স্যানিটেশন ব্যাবস্থাও শোচনীয়।কিন্ত এত কষ্টের দমিয়ে রাখতে পারেনি বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের।উপজেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বিদ্যালয়ে,অভিভাবক সমাবেশ,মেয়েদের ক্রিকেট ম্যাচ,বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা সহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিদ্যালয়টি।

বিদ্যালয়টির অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিউর নুন বলেন,”আমাদের আশেপাশের সব স্কুল পাকা,শুধু আমাদের স্কুল ভাঙ্গা।আমাদের ক্লাস করতে কষ্ট হয়।এই ভাঙ্গা ঘরে ক্লাস করতে ভাল লাগে না।এজন্য আমরা পাকা ভবনে ক্লাস করতে চাই।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৪৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন । প্রধান শিক্ষকসহ জন শিক্ষক রয়েছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন সরকার জানান, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটি নিগুঢ় পল্লী অঞ্চলে হলেও ফলাফল অত্যন্ত ভালো।বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হবার থেকে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি’র সাথে কথা বলেছি তারা শুধু আশ্বাস দিয়ে গেছেন।আমরা মন্ত্রণালয়ে আবেদন দিয়েছি কিন্তু তারা আমলে নেয়নি।

তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়টির পাকা ভবন না থাকার কারনে টিনের ঘরে পাঠদান করানো খুব কষ্ট হচ্ছে।এখন তীব্র তাপদাহে আর ঝড়বৃষ্টি তে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম সামসুল হক বলেন,স্কুলের বিদ্যালয় চারতলা ভবন নির্মাণের জন্য বাজেট পাস হয়েছে। অচিরেই ঠিকাদার নিয়োগ হবে। দ্রুত কাজ শুরু হবে।

প্রান্ত কুমার তালুকদার
উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ